পর্ব৩ঃ রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের ধাপসমূহ

রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের ধাপসমূহ: ঝুঁকি মূল্যায়নের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা

রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের ধাপসমূহ

প্রতিদিনের কর্মস্থলে ছোট-বড় নানা ধরনের ঝুঁকি থাকে। একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সেই ঝুঁকিগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা, মূল্যায়ন করা, নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নিয়মিত পর্যালোচনা করা। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে “রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট”।

আজ আমরা জানবো, কীভাবে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। এটি কেবল একটি চেকলিস্ট নয়, বরং একটি কৌশলগত পদ্ধতি যা কর্মীদের নিরাপত্তা, প্রতিষ্ঠানকে আইনি ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

✅ ধাপ ১: হ্যাজার্ড শনাক্তকরণ (Identifying Hazards)

রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো– হ্যাজার্ড চিহ্নিত করা

হ্যাজার্ড বলতে কী বোঝায়?
হ্যাজার্ড হলো এমন কোনো বস্তু, অবস্থা বা প্রক্রিয়া যা শারীরিক আঘাত, অসুস্থতা বা সম্পদের ক্ষতি ঘটাতে পারে।

যেভাবে হ্যাজার্ড শনাক্ত করবেন:

  • কর্মস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করুন

  • যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক, বিদ্যুৎ, উচ্চতা, শব্দ, আলো ও তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন

  • পূর্ববর্তী দুর্ঘটনার রেকর্ড বিশ্লেষণ করুন

  • কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিন ও তাদের মতামত শুনুন

উদাহরণ:

  • ভেজা মেঝে → পিছলে পড়ার হ্যাজার্ড

  • খোলা বৈদ্যুতিক তার → বৈদ্যুতিক শক হ্যাজার্ড

  • রাসায়নিক কন্টেইনার → ইনহেলেশন বা বার্ন হ্যাজার্ড

risk assessment

✅ ধাপ ২: ঝুঁকির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন (Assessing Risks)

এখন আপনাকে প্রতিটি হ্যাজার্ডের প্রভাব এবং তার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করতে হবে।
ঝুঁকি মূল্যায়ন দল কে কিছু মূল প্রশ্নে উত্তর বের করতে হবে,

  • এই হ্যাজার্ডে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তা কতটা গুরুতর হতে পারে?

  • দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কতটা?

ঝুঁকি মূল্যায়নের সূত্র (সহজ করে):
👉  ঝুঁকি = সম্ভাবনা × পরিণতি (Probability × Severity)

একটি সাধারণ স্কেল ব্যবহার করা যায়:

সম্ভাবনাপরিণতিঝুঁকির স্তর
উচ্চউচ্চগম্ভীর ঝুঁকি
মাঝারিমাঝারিনিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকি
নিম্ননিম্নগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি

এই ধাপে একটি রিস্ক ম্যাট্রিক্স (Risk Matrix) ব্যবহার করে ঝুঁকির স্তর শ্রেণিবিন্যাস করতে পারেন।

✅ ধাপ ৩: ঝুঁকির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন (Control Measures)

একবার ঝুঁকি মূল্যায়ন হয়ে গেলে, আপনাকে সে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নোক্ত “Hierarchy of Control” অনুসরণ করতে পারেন:

১. Elimination (ঝুঁকি সম্পূর্ণ দূর করা):

যদি কোনো কাজের পদ্ধতি বা সরঞ্জাম পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত করা যায়, তাহলে সেটিই সেরা সমাধান।

২. Substitution (বিকল্প ব্যবহার):

বিপজ্জনক পদার্থ বা পদ্ধতির পরিবর্তে কম বিপজ্জনক কিছু ব্যবহার করা।

৩. Engineering Controls:

ফিজিক্যাল ব্যারিয়ার, গার্ডিং, সেন্সর ইত্যাদি ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা।

৪. Administrative Controls:

নিরাপত্তা নীতিমালা, SOP, ট্রেনিং, রোস্টার পরিবর্তন ইত্যাদি।

৫. PPE (Personal Protective Equipment):

হেলমেট, গ্লাভস, গগলস, মাস্ক ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করা।

👉 মনে রাখবেন, PPE সবশেষ বিকল্প, প্রথম নয়।

✅ ধাপ ৪: ডকুমেন্টেশন ও রিপোর্টিং (Documentation & Record Keeping)

রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে নথিভুক্ত করতে হবে। এতে ভবিষ্যতে পর্যবেক্ষণ, অডিট এবং প্রমাণাদির কাজে সহায়তা পাওয়া যাবে।

একটি ভাল রেকর্ডে যা থাকতে হবে:

  • তারিখ ও সময়

  • হ্যাজার্ডের বিবরণ

  • ঝুঁকি স্তর

  • গৃহীত ব্যবস্থা

  • দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি

  • ফলো-আপ তারিখ

এছাড়া, ফর্ম বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই তথ্য সহজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

✅ ধাপ ৫: পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা (Monitoring & Review)

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট একটি এককালীন কাজ নয়। এটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও হালনাগাদ করতে হয়।

পর্যালোচনা প্রয়োজন হয় যখন:

  • নতুন যন্ত্রপাতি/প্রক্রিয়া যোগ হয়

  • দুর্ঘটনা ঘটে

  • নিয়মনীতি পরিবর্তন হয়

  • বছরে অন্তত একবার নিয়মিতভাবে

কার্যকর পর্যালোচনার জন্য:

  • ইনস্পেকশন রিপোর্ট বিশ্লেষণ

  • কর্মীদের মতামত ও ফিডব্যাক

  • পূর্ববর্তী অ্যাকশন প্ল্যানের ফলাফল

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এর প্রতিটি ধাপে সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব প্রয়োজন। একটি সফল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট মানে হলো:

  • কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল

  • প্রতিষ্ঠানের আইনি সুরক্ষা

  • কম দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি

  • উচ্চ উৎপাদনশীলতা ও মনোবল

তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই উচিত ধাপে ধাপে, সঠিকভাবে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট বাস্তবায়ন করা।

এই সিরিজের বাকি পোস্ট

আরও নতুন পোস্ট

এই প্রথম Compliance Bangladesh Dot Com এ ভিজিট করছেন?

আমাদের আছে সোশাল, সিটিপ্যাট, এনভায়রনমেন্টাল কমপ্লায়েন্স এর বৃহৎ আর্কাইভ।

চলুন মেইন পেজ যাই  আর সব টপিকগুলো দেখি

মেইন পেজ

About The Author

Rakib Sarowar

Rakib Sarowar is the founder and lead author of the Compliance Bangladesh. His passion for helping people in all aspectes of Compliance Related Issues. He is very keen to learn new things, especially Technology. In addition to write for CB, Rakib also engage as a Central Manager- Compiance & Industrial Safety in a multinational RMG complany.

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

43
MCQ 05

কোন পরিস্থিতিতে একটি প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক?

আমাদের সাথে থাকুন