আসুন জেনে নেই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ কৌশল | পর্বঃ ৭

আসুন জেনে নেই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ কৌশল

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত বিপদের ঝুঁকি প্রতিরোধ করাই মূল লক্ষ্য। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলোর একটি গঠনমূলক কাঠামো রয়েছে, যা “Hierarchy of Controls” নামে পরিচিত।

এই ব্লগে আমরা জানবো কীভাবে বিভিন্ন স্তরের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Elimination, Substitution, Engineering Control, Administrative Control, PPE) ব্যবহার করে ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়।

🛡️ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের স্তরসমূহ (Hierarchy of Controls)

ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি ধাপ রয়েছে:
১. Elimination
২. Substitution
৩. Engineering Controls
৪. Administrative Controls
৫. Personal Protective Equipment (PPE)

প্রতিটি স্তর একে অপরের চেয়ে ভিন্ন ও কার্যকারিতায় আলাদা। নিচে প্রতিটি ধাপ বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।

১। Elimination (বিপদ সম্পূর্ণ অপসারণ করা)

এই স্তর হলো সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রথম পদক্ষেপ।

যদি বিপদ বা ঝুঁকি সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে ফেলা যায়, তাহলে তার ঝুঁকিও থাকবে না।
উদাহরণ:

• উচ্চতায় কাজের প্রয়োজন হলে কাজটি নিচে সরিয়ে নেওয়া।

• কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার না করে বিকল্প প্রক্রিয়া ব্যবহার করা।

কার্যকারিতা:
Elimination প্রক্রিয়াটি ঝুঁকি চিরতরে সরিয়ে দেয়।

2| Substitution (বিকল্প উপাদান ব্যবহার)

যখন বিপদ সরানো সম্ভব নয়, তখন বিপজ্জনক উপাদানের পরিবর্তে কম বিপজ্জনক উপাদান ব্যবহার করা হয়।

এতে ঝুঁকি কম হয়, কিন্তু একেবারে দূর হয় না।

উদাহরণ:

• শক্তিশালী অ্যাসিডের পরিবর্তে কম ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক ব্যবহার।

• সলভেন্টের পরিবর্তে পানি-ভিত্তিক দ্রবণ ব্যবহার।

কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে সবসময় বিকল্প উপকরণ ব্যবহার করা উচিত।

3| Engineering Controls (প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ)

যান্ত্রিক বা প্রকৌশলগত উপায়ে বিপদকে আলাদা করা হয় কাজের জায়গা থেকে।

এতে কর্মী ও বিপদের মাঝে একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

উদাহরণ:

• মেশিন গার্ড লাগানো

• ফিউম এক্সট্রাকশন সিস্টেম

• শব্দ কমানোর জন্য সাউন্ড প্রুফিং

• স্কাফোল্ডিংয়ে রেলিং দেওয়া

কার্যকারিতা:
ঝুঁকি রয়ে গেলেও প্রযুক্তিগতভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে।

4| Administrative Controls (প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ)

এই স্তরে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সময়, নীতিমালা, প্রশিক্ষণ ও কর্মপদ্ধতির ব্যবহার করা হয়।

কর্মীদের আচরণ ও কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে ঝুঁকি কমানো হয়।

উদাহরণ:

• কাজের সময়সীমা নির্ধারণ

• সঠিক SOP তৈরি

• নিরাপত্তা ট্রেনিং দেওয়া

• নির্দেশিকা বোর্ড ব্যবহার করা

সতর্কতা:
মানবিক ত্রুটির সম্ভাবনা রয়ে যায়।

৫। PPE (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম)

ঝুঁকি কমানোর সর্বশেষ এবং সবচেয়ে দুর্বল স্তর।

PPE কর্মীকে সরাসরি বিপদের মুখোমুখি হওয়া থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়।

উদাহরণ:

• হেলমেট

• গ্লাভস

• মাস্ক

• সেফটি শু

• গগলস

কার্যকারিতা:
প্রতিরোধ সীমিত, তবে দুর্ঘটনার ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।

নিয়ন্ত্রণ কৌশল বেছে নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

১. প্রথমে বিপদ চিহ্নিত করুন (Hazard Identification)
২. ঝুঁকি বিশ্লেষণ করুন (Likelihood × Severity)
৩. তারপর Hierarchy অনুযায়ী ব্যবস্থা বেছে নিন
৪. সম্ভব হলে Elimination বা Substitution প্রাধান্য দিন
৫. Engineering ও Administrative ব্যবস্থা নিন
৬. PPE সর্বশেষ পর্যায়ে ব্যবহার করুন

ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ কৌশল বেছে নেওয়ার সময় কেবল PPE-র ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। যথাযথভাবে Elimination, Substitution, ও Engineering Control ব্যবহারে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব। প্রতিটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতা বুঝে তার প্রয়োগই একজন দক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব।

একে আমরা “প্রতিরোধই সর্বোত্তম ব্যবস্থা” বলতেই পারি।

এই সিরিজের বাকি পোস্ট

আরও নতুন পোস্ট