রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? | পর্বঃ ০১

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? | পর্বঃ ০১

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমান শিল্প জগতে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি যে কোন ভুল বা অবহেলা কর্মীর জীবন, উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। এই ঝুঁকিগুলোর সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া, বিশ্লেষণ করা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যই “রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট / ঝুঁকি নির্ণয়” একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া।

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট / ঝুঁকি নির্ণয় কী?

রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট (ঝুঁকি নির্ণয়) হলো একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো কাজ বা পরিবেশে সম্ভাব্য ঝুঁকি (hazard) চিহ্নিত করা হয়, সেই ঝুঁকির সম্ভাব্যতা (likelihood) এবং প্রভাব (severity) বিশ্লেষণ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সরলভাবে বললে:

“রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট মানে ঝুঁকি আগে থেকেই চিনে ফেলা এবং তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া।”

🎯 রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের উদ্দেশ্য

✅ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

✅ দুর্ঘটনা ও আহত হওয়ার ঝুঁকি কমানো

✅ আইনগত বাধ্যবাধকতা পূরণ

✅ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা

✅ আর্থিক ক্ষতি ও ভাবমূর্তি ক্ষতি প্রতিরোধ করা

⚠️ হ্যাজার্ড বনাম রিস্ক

বিষয়

ব্যাখ্যা

Hazard

(ঝুঁকিপূর্ণ বস্তু)

যেকোনো বস্তু বা অবস্থা যা ক্ষতি করতে পারে (যেমন: খোলা তার, কেমিক্যাল, শব্দ)

Risk (ঝুঁকি)

ঐ হ্যাজার্ড থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা এবং তার প্রভাব

উদাহরণ: একটি মেশিনে কোনো সুরক্ষা কভার না থাকা হলো Hazard, এবং এতে হাত কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা হলো Risk।

কোথায় রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট প্রয়োজন?

  • উৎপাদন ইউনিট/কারখানায়
  • কেমিক্যাল ব্যবহারে
  • আগুন সংক্রান্ত ব্যবস্থায়
  • বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারে
  • নির্মাণ সাইটে
  • অফিস পরিবেশে (বিশেষত ইলেকট্রিকাল ও ফায়ার সেফটি)
  • ইত্যাদি

📜 বাংলাদেশে রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের আইনগত দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং ILO Convention 155 অনুযায়ী, কর্মস্থলে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট করা বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং ILO Convention 155 অনুযায়ী, কর্মস্থলে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট (ঝুঁকি নিরূপণ) করা বাধ্যতামূলক।

📚 রেফারেন্স:

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা (Amended), গেজেট: সেপ্টেম্বর ২০২২ | বিধি ৭৫

(১) কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে প্রতি বছর অন্তত একবার কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি নিরূপণ করিবেন এবং সংশ্লিষ্ট উপ-মহাপরিদর্শককে অবহিত করিবেন।

(২) নিরূপিত ঝুঁকি প্রতিকারে ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং বছরের শেষ হইবার ৩০ দিন পূর্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করিবেন।

ILO Convention 155 – Occupational Safety and Health, 1981

Article 4(2):

রাষ্ট্রগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর জাতীয় নিরাপত্তা স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের নির্দেশ দেয় যা নিয়মিত পর্যালোচনার আওতায় আসবে।

“Each Member shall, by laws or regulations or by any other method consistent with national conditions and practice, formulate, implement and periodically review a coherent national policy on occupational safety, occupational health and the working environment.” 

Article 11(a):

নিয়োগকর্তা যাতে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

“The employer shall be required to ensure that, so far as is reasonably practicable, the workplaces, machinery, equipment, and processes under their control are safe and without risk to health.”

📌 সংক্ষেপে:

“বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, সংশোধিত গেজেট ২০২২-এর বিধি ৭৫ অনুযায়ী, প্রতি বছর অন্তত একবার ঝুঁকি নিরূপণ তা প্রতিকারে পদক্ষেপ নেওয়া মালিকের জন্য বাধ্যতামূলক

আর একটি কার্যকর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে শুধু আইনি সুরক্ষা দেয় না, বরং এর মাধ্যমে কমপ্লায়েন্স অডিটেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

একটি কার্যকর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শক্ত নিরাপত্তা ঢাল। এটি কেবল নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং সচেতনতা গঠনের মাধ্যম। সঠিকভাবে ঝুঁকি মূল্যায়ন করলে আপনি আগেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারবেন, যা কর্মীদের মনোবল ও প্রোডাকশন দুটোই বাড়াবে।

 

আরও নতুন পোস্ট

এই প্রথম Compliance Bangladesh Dot Com এ ভিজিট করছেন?

আমাদের আছে সোশাল, সিটিপ্যাট, এনভায়রনমেন্টাল কমপ্লায়েন্স এর বৃহৎ আর্কাইভ।

চলুন মেইন পেজ যাই  আর সব টপিকগুলো দেখি

মেইন পেজ

About The Author

Rakib Sarowar

Rakib Sarowar is the founder and lead author of the Compliance Bangladesh. His passion for helping people in all aspectes of Compliance Related Issues. He is very keen to learn new things, especially Technology. In addition to write for CB, Rakib also engage as a Central Manager- Compiance & Industrial Safety in a multinational RMG complany.

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

28
MCQ 05

কোন পরিস্থিতিতে একটি প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক?

আমাদের সাথে থাকুন