শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগ পত্র , পরিচয় পত্র এবং সার্ভিস বই

শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগ পত্র, পরিচয় পত্র এবং সার্ভিস বই

 

আমাদের ধারাবাহিক ব্লগ – ” শ্রম আইন নিয়ে একটু খানি আলোচনা ” । যেখানে শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আমার লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, বিধিমালা ২০১৫ এবং (সংশোধন) আইন, ২০১৮ এর আইন গুলো এক সাথে করে (merge) প্রতি দিন একটি করে ধারা শেয়ার করা।

Happy Learning !!

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬

” নিয়োগ পত্র,  পরিচয় পত্র এবং সার্ভিস বই ” সম্পর্কে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এ উল্লেখ আছে,

বাংলাদেশ শ্রম আইন (২০০৬) এর ধারা  ৫ এবং ৬ অনুযায়ী,

৫ । নিয়োগ পত্র ও পরিচয় পত্রঃ

কোন মালিক নিয়োগপত্র প্রদান না করে কোন শ্রমিক নিয়োগ করেতে পারবেন না, এবং নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে ছবিসহ পরিচয় পত্র প্রদান করবেন।            

৬ । সার্ভিস বইঃ

প্রত্যেক মালিক তার নিজ খরচে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য একটি সার্ভিস বইয়ের ব্যবস্থা করবেন। প্রত্যেক সার্ভিস বই মালিকের হেফাজতে থাকবের

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী,

বিধি ৪ ।       ধারা ৫ মোতাবেক শ্রমিককে প্রদত্ত নিয়োগপত্রে  নিম্নবর্ণিত তথ্যের উল্লেখ থাকিবে, যথা :-

(ক)       শ্রমিকের নাম;

(খ)        পিতার নাম;

(গ)       মাতার নাম;

(ঘ)       স্বামী বা স্ত্রীর নাম (প্রযোজ্য        ক্ষেত্রে);

(ঙ)       ঠিকানা : বর্তমান:-

স্থায়ী:-

(চ)        পদবি, কাজের ধরন,      যোগদানের       তারিখ;

(ছ)       শ্রমিকের শ্রেণি;

(জ)      মজুরি বা বেতন স্কেল (মজুরি বা বেতন এবং বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির হার যদি থাকে);

(ঝ)       অন্যান্য প্রদেয় আর্থিক সুবিধা (বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা, খাদ্য, যাতায়াত, উৎসব ও হাজিরা ভাতা এবং গ্রাচুইটি (যদি থাকে); এবং

(ঞ)      নিয়োগের যাবতীয় শর্ত প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান চাকরি বিধি (যদি থাকে) ও বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী পরিচালিত হইবে মর্মে উল্লেখ।

বিধি (৫)  প্রত্যেক মালিক তাহার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে ফরম-৬ অনুযায়ী মালিকের খরচে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করিবেন।

বিধি (৬)  শ্রমিক পরিচয়পত্র হারাইয়া ফেলিলে ৫০ টাকা ফি পরিশোধ সাপেক্ষে নূতন পরিচয়পত্র প্রদান করা যাইবে।

বিধি (৭)  নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বহি প্রদান সম্পর্কিত তথ্য রেজিস্টারে ফরম-৬(ক) অনুযায়ী সংরক্ষণ করিতে হইবে ।

বিধি (৮)  এই বিধিমালায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কোন শ্রমিক বা প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনার দায়িতে¦ নিয়োজিত ব্যক্তি নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনকালে বা চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশলের গোপনীয়তা সংরক্ষণ করিবেন।

বিধি ১৯।      নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান এবং গোপনীয়তা রক্ষাকরণ:

(১)  কোন মালিক নিয়োগপত্র প্রদান না করিয়া কোন শ্রমিককে নিয়োগ করিতে পারিবেন না।

(২) কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরিকালীন কোন ব্যক্তিকে কেবল একবার নিয়োগপত্র প্রদান করিতে পারিবে।

বিধি ২০।      সার্ভিস বহি, আকার ও তথ্যের বিভাজন।-

(১) সার্ভিস বহি ফরম-৭ অনুযায়ী হইবে এবং উহাতে শক্ত মলাটসহ টেকসই কাগজের ১৬ টি মুদ্রিত পৃষ্ঠা থাকিতে হইবে।

বিধি ২১।      সার্ভিস বহিতে তথ্য অন্তর্ভুক্তি।-

(১) স্থায়ীকরণের তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে মালিক সংশ্লি­ষ্ট শ্রমিকের প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ তাহার সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ করিবেন।

বিধি ২২।      সার্ভিস বহি সরবরাহ, জমা প্রদান ও অবিকল নকল (Duplicate) সার্ভিস বহি সরবরাহ।

(১) কোন শ্রমিক নিয়োগ বা শিক্ষানবিশকাল সমাপ্ত হইবার ১৫ দিনের মধ্যে মালিক প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য আলাদা আলাদা সার্ভিস বহি খুলিবার ব্যবস্থা করিবেন ও উহাতে সংযোজনের জন্য শ্রমিকের ছবি উঠাইবার ব্যয় মালিক বহন করিবেন।

(২)        নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঘটনা সংঘটনের ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে শ্রমিকের পরবর্তী বা নূতন তথ্য সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে, যথা:-

ক। বেতনের স্কেল বা মজুরির হার পরিবর্তন;

খ। একই প্রতিষ্ঠানের অন্য শাখায় বা ভিন্ন চাকরিতে অথবা একই মালিকের ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলি;

গ। শ্রমিক কর্তৃক কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ বা কোন বিশেষ দক্ষতা অর্জন;

ঘ। বার্ষিক ছুটি ভোগ করা বা নগদায়ন;

ঙ। চাকরি হইতে ছাঁটাই, ডিসচার্জ, বরখাস্ত, অবসান, পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ;

চ। কোন জরিমানা বা দন্ড আরোপ এবং পুরস্কার প্রদান বা প্রশংসা জ্ঞাপন:

তবে শর্ত থাকে যে, শ্রমিকের বিরুদ্ধে আনীত কোন অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত উহা সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ করা যাইবে না।

বাংলাদেশের শ্রম আইন শ্রমিকদের অধিকার এবং মালিকদের দায়িত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য বেশ সুদৃঢ়। এই আইনে শ্রমিকদের জন্য নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র এবং সার্ভিস বহি প্রদান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা শ্রমিক ও মালিক উভয়ের জন্য সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। আসুন, এসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের বিস্তারিত আলোচনা করি।

নিয়োগপত্র: সঠিক তথ্যের নিশ্চয়তা

ধারা ৪ অনুযায়ী, কোনো শ্রমিককে নিয়োগপত্র প্রদান না করে মালিক তাঁকে নিয়োগ করতে পারবেন না। এই নিয়োগপত্রে শ্রমিকের ব্যক্তিগত ও পেশাগত তথ্য উল্লেখ থাকতে হবে। যেমন:

  • শ্রমিকের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, এবং স্বামী বা স্ত্রীর নাম (যদি প্রযোজ্য হয়)।
  • বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা।
  • পদবি, কাজের ধরন এবং যোগদানের তারিখ।
  • শ্রমিকের শ্রেণি এবং বেতন স্কেল।
  • অন্যান্য আর্থিক সুবিধার উল্লেখ, যেমন বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা, যাতায়াত, উৎসব ভাতা ইত্যাদি।

পরিচয়পত্র: মালিকের ব্যয়ে প্রদান

ধারা ৫ অনুসারে, মালিকের খরচে প্রত্যেক শ্রমিককে ফরম-৬ অনুযায়ী ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করা বাধ্যতামূলক। যদি কোনো শ্রমিক তার পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলে, তবে ৫০ টাকা ফি দিয়ে নতুন পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা যাবে।

সার্ভিস বহি: শ্রমিকের চাকরির তথ্যের বিবরণ

ধারা ২০ অনুযায়ী, সার্ভিস বহি ফরম-৭ অনুযায়ী তৈরি হতে হবে এবং এতে ১৬টি মুদ্রিত পৃষ্ঠা থাকতে হবে। এই সার্ভিস বহিতে শ্রমিকের বেতন, পদোন্নতি, বদলি, প্রশিক্ষণ, ছুটি, শাস্তি এবং পুরস্কারসহ সকল প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে। বিশেষ করে:

  • স্থায়ীকরণের এক মাসের মধ্যে শ্রমিকের সব প্রয়োজনীয় তথ্য সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
  • বেতন স্কেলে পরিবর্তন, চাকরির ধরণ পরিবর্তন, ছুটি বা ছাঁটাইয়ের বিষয়গুলোও এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

গোপনীয়তা রক্ষা

আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক কৌশল ও গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব। ধারা ১৯ অনুযায়ী, কোনো শ্রমিক বা প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি কাজের সময় প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় তথ্য ফাঁস করতে পারবেন না।

সারসংক্ষেপ

বাংলাদেশের শ্রম আইন শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম প্রণয়ন করেছে। নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র এবং সার্ভিস বহি শ্রমিকের চাকরির সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করে এবং এক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি বা জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। শ্রমিক এবং মালিকের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এসব নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮

  • কিছু উল্লেখ নেই ।

আরও নতুন পোস্ট

এই প্রথম Compliance Bangladesh Dot Com এ ভিজিট করছেন?

আমাদের আছে সোশাল, সিটিপ্যাট, এনভায়রনমেন্টাল কমপ্লায়েন্স এর বৃহৎ আর্কাইভ।

চলুন মেইন পেজ যাই  আর সব টপিকগুলো দেখি

মেইন পেজ

About The Author

Rakib Sarowar

Rakib Sarowar is the founder and lead author of the Compliance Bangladesh. His passion for helping people in all aspectes of Compliance Related Issues. He is very keen to learn new things, especially Technology. In addition to write for CB, Rakib also engage as a Central Manager- Compiance & Industrial Safety in a multinational RMG complany.

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12
Bangladesh Labour Law 2006

অসদাচরণ ক্ষেত্রে অনধিক কতজন সদস্য সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হইবে?

আমাদের সাথে থাকুন