ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ: রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের প্রথম ধাপ | পর্বঃ ০৫

ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ: রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের প্রথম ধাপ

একটি কার্যকর রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের মূল ভিত্তি হলো যথাযথভাবে ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা। এ কাজটি যত নিখুঁতভাবে করা যায়, রিস্ক কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন ততটাই কার্যকর হয়। এই পর্যায়ে আমরা শিখব হ্যাজার্ড (Hazard) লিস্ট কীভাবে তৈরি করা যায়, কোন পদ্ধতিতে ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়, এবং এটি বাস্তবে কীভাবে প্রয়োগ করা হয়।

ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ বনাম হ্যাজার্ড (Hazard) চিহ্নিতকরণ

🔸 হ্যাজার্ড (Hazard ) অর্থ এমন কোন উৎস বা পরিস্থিতি যা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
🔸 ঝুঁকি (Risk) হলো সেই হ্যাজার্ডটি বাস্তবে ঘটার সম্ভাবনা এবং এর পরিণতির মাত্রা।

তাই, ঝুঁকি চিহ্নিতকরণের প্রথম ধাপই হলো হ্যাজার্ড শনাক্তকরণ এবং তার একটি সুশৃঙ্খল তালিকা তৈরি করা।

হ্যাজার্ড লিস্ট কীভাবে তৈরি করবেন?

হ্যাজার্ড লিস্ট তৈরি মানে হলো প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সকল সম্ভাব্য ক্ষতিকর উৎস বা পরিস্থিতির একটি তালিকা তৈরি করা যা:

১। কর্মীর শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে

২। প্রতিষ্ঠান বা সম্পদের ক্ষতি করতে পারে

৩। পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে

ধাপসমূহ:
✅ কর্মস্থলের প্রত্যেক বিভাগ ও কার্যপ্রবাহ বিশ্লেষণ করুন
✅ পূর্ববর্তী দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করুন
✅ শ্রমিক ও সুপারভাইজরের সঙ্গে আলোচনা করুন
✅ মেশিন, কেমিক্যাল ও কাজের পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে পয়েন্ট তৈরি করুন
✅ প্রতিটি হ্যাজার্ডের পাশে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং তার প্রকৃতি (ফিজিক্যাল, কেমিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ইত্যাদি) লিখে রাখুন।

উদাহরণ: একটি সাধারণ হ্যাজার্ড লিস্ট

ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি (Upgraded with Hazard Focus):

ধাপ ১: সাইট ভিজিট ও পরিদর্শন

প্রত্যেকটি এরিয়া/ সেকশনে গিয়ে সরাসরি চোখে দেখুন কোথায় কোথায় হ্যাজার্ড আছে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় শব্দ, তাপ, আগুন বা কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়।

ধাপ ২: কর্মীদের অংশগ্রহণ

শ্রমিক ও কর্মচারিদের জিজ্ঞেস করুন – “আপনার কাজের সময় এমন কী কী হয় যা আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে?” তারা জানাতে পারেন এমন কিছু ঝুঁকি যা আপনি চোখে দেখেন না।

ধাপ ৩: ডকুমেন্ট রিভিউ

• ইনসিডেন্ট রিপোর্ট

• নিয়ার-মিস রিপোর্ট

• পূর্বের অডিট ফলাফল
  এসব বিশ্লেষণ করে প্যাটার্ন খুঁজে বের করুন।

ধাপ ৪: চেকলিস্ট ব্যবহার

বিশেষ করে নিম্নোক্ত বিষয়ভিত্তিক চেকলিস্ট তৈরি করুন:

• ফিজিক্যাল সেফটি চেক

• কেমিক্যাল হ্যান্ডলিং

• ইলেকট্রিক্যাল নিরাপত্তা

• পিপিই ব্যবহারের পর্যবেক্ষণ

হ্যাজার্ড চিহ্নিতকরণের সময় মনে রাখার বিষয়

✅ করণীয়:

• কাজ অনুযায়ী ঝুঁকি নির্ধারণ করুন

• কর্মীদের পর্যবেক্ষণ করুন

• প্রতিটি সম্ভাব্য ক্ষতির উৎস লিখে ফেলুন

❌ বর্জনীয়:

• অনুমানের ভিত্তিতে হ্যাজার্ড বাদ দেওয়া

• একবারের বেশি একই ঝুঁকি না দেখা

• রুটিন ঝুঁকিকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবা

বাস্তব জীবনের একটি উদাহরণ

একটি নিট ডাইং কারখানায় শ্রমিকরা ডায়িং সেকশনে কাজ করার সময় PPE পরতেন না। ম্যানেজমেন্ট এটি “কম গুরুত্বপূর্ণ” মনে করে অবহেলা করে। পরে ৩ জন শ্রমিক কেমিক্যালে ত্বক পুড়িয়ে ইনজুরড হন। ইনসিডেন্ট রিভিউতে দেখা যায়, MSDS-এ স্পষ্টভাবে PPE বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু রিস্ক অ্যাসেসমেন্টে হ্যাজার্ড লিস্ট ছিল না। এখানেই বোঝা যায়, হ্যাজার্ড লিস্ট তৈরি না করাই বড় ভুল এবং এটি ঝুঁকি চিহ্নিতকরণের একটি অপরিহার্য ধাপ।

একটি সফল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট শুরু হয় হ্যাজার্ড শনাক্তকরণ এবং ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ দিয়ে। যদি আপনি এই প্রথম ধাপেই অসাবধান হন, তবে পরবর্তী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার উচিত প্রথমেই সময় ও মনোযোগ দিয়ে হ্যাজার্ড লিস্ট তৈরি করে ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা।

এই সিরিজের বাকি পোস্ট

আরও নতুন পোস্ট